Skip to content

গল্প হলেও সত্যি

গল্প হলেও সত্যি

গল্প হলেও সত্যি
#Indranil

ঘটনা-১
ডাক্তারঃ আপনার রিপোর্ট বলছে, আপনার কোনো শুক্রাণু নেই। আর অপারেশন করে শুক্তাণু পাওয়ারও সম্ভাবনা নেই। আপনাদের অপশনস হল, ডোনার স্পার্ম ব্যবহার করা বা দত্তক নেওয়া।
স্বামীঃ ডোনার মানে তো আমার বাচ্চা হল না। তার থেকে দত্তক নেওয়া ভালো। একটা বাচ্চার হিল্লে হয়ে যাবে। কত লোকই তো নিচ্ছে। কী ঠিক বলেছি তো? আর বাচ্চাটা তোমাকেই তো মা বলে ডাকবে।

স্ত্রী মুখ নিচু করে ঘাড় নাড়লো। হ্যা কি না ঠিক বোঝা গেল না।

ঘটনা-২
ডাক্তারঃ আপনার প্রিম্যাচিওর ওভারিয়ান ফেলিওর হয়েছে। মানে ডিম্বাশয়ে আর ডিম্বাণু অবশিষ্ট নেই। অন্য কোনো কম বয়সী মহিলার ডিম্বাণুর সঙ্গে আপনার স্বামীর শুক্রাণু মিলিয়ে ভ্রূণ তৈরি করতে হবে। এতে আপত্তি থাকলে দত্তক নিতেও পারেন।
স্ত্রীঃ ডোনার নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমাদের একজনের জিন তো সন্তানের মধ্যে থাকবে।

স্বামী এক দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। এ চোখের ভাষা বোঝার মতো কোনো চ্যাপ্টার আমাদের ডাক্তারি পড়ার সিলেবাসে নেই।

ঘটনা-৩
স্ত্রীঃ ডাক্তারবাবু আমি ১৫ বছরের একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছি। এ শোক কোনোদিন ভোলার নয়। তবু যদি একবার মা হতে পারতাম!
ডাক্তারঃ এই বয়সে মা হলে আপনার জীবনের ঝুঁকি আছে।

ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর শরীরের ভাষা বলছে, তিনি আর কাউকে হারাতে রাজি নন।

ঘটনা-৪
ডাক্তারঃ স্যরি, এবারও রেজাল্ট নেগেটিভ। পরের বার…
স্বামীঃ দাদা, তুমি অনেক করেছো। আর পরের বার নয়। একটা জায়গায় থামতেই হবে।
স্ত্রীঃ ঠিকই দাদা, আমরা দুজনেই দুজনকে নিয়ে খুব খুশিতে আছি। কিছু আশপাশের লোকজন আমাদের এই ভালো থাকাটা ঠিক বুঝতে পারে না। আমাদের নয়, ওনাদের চিকিৎসার প্রয়োজন।

সব কিছু কেন আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখি।

ঘটনা-৫
শাশুড়িঃ আমি জানি, দোষ আমার ছেলের মধ্যে। কিন্তু তুমি আমার বউমার চিকিৎসা কেন করছো না ডাক্তার?
ডাক্তারঃ আপনার ছেলের অনুমতি ও সই ছাড়া আমরা এ ধরনের চিকিৎসা করতে পারি না।
শাশুড়িঃ বউমা চাইলে কিন্তু অন্যভাবেও মা হতে পারতো। একটা মেয়ের সন্তান না হওয়ার যন্ত্রণা দূর করার থেকে তোমার কাছে আইন বড় হল? আসলে তোমরা সব ছেলেরাই একরকম। সহানুভূতি নামের বস্তুটা কিছুমাত্র না দিয়েই ঈশ্বর তোমাদের পৃথিবীতে পাঠান।

কিন্তু আইনের যে কোনো ফাঁক নেই!

এই সব চরিত্র আমাদেরই পরিচিত। ওদের কথা শুনি, আনন্দ-দুঃখ-হতাশা ভাগ করে নিই, ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেও আলাপচারিতার রেশ রেখে যায়। অল্প কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিজের মধ্যে নিজেকে হাতড়ে বেড়াই, কাছের মানুষদের নতুনভাবে চিনতে শিখি, সমস্যাগুলো অন্যভাবে ভাবতে শিখি।

More Post