IVF চিকিৎসার আগে প্রত্যেকের যা জানা দরকার
যে কোনো চিকিৎসার সময় কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। একই কথা প্রযোজ্য বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা বিশেষত আই ভি এফের সময়েও। এক্ষেত্রে যে সমস্যা সম্পর্কে সবার সচেতন থাকা দরকার তাকে বলে Ovarian hyperstimulation Syndrome বা সংক্ষেপে OHSS। যদিও OHSS মূলত IVF চিকিৎসার সমস্যা। কিছু অল্প ক্ষেত্রে Clomiphene tablet দিয়ে ডিম্বাণু তৈরির সময় (Ovulation induction) OHSS হতে পারে।
OHSS -এর উপসর্গ: IVF করার সময় মহিলাদের ডিম্বাণু সংগ্রহের পর কিছু অস্বস্তি হওয়া খুব স্বাভাবিক। তবে কিছু কিছু লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি করা উচিত নয়। যেমন
Mild OHSS: খুব সামান্য পরিমাণে পেটে ফোলাভাব, অস্বস্তি বা বমিভাব।
Moderate OHSS: যখন অস্বস্তি ও বমিভাব ছাড়াও পেটে জল জমে গিয়ে আরো ফুলে ওঠে। তখন পেটে ব্যাথা হতে পারে আবার বমি হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।
Severe OHSS: পেটে জল জমে ফুলে ওঠা ছাড়াও প্রচন্ড তেষ্টা পায় ও শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দেয়। খুব সামান্য ইউরিন হতে পারে ও তার রঙ বদলে যেতে পারে। এছাড়া বুকে জল জমে যাওয়ায় দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্টও। খুব কম ক্ষেত্রে হলেও কখনও কখনও পায়ের বা ফুসফুসের শিরায় রক্ত জমে এম্বোলিজম হতে পারে। এর উপসর্গ হিসেবে পা ফোলা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হয়।
OHSS এর কারণ: IVF চিকিৎসার জন্য Gonadotrophins নামে ইনজেকশন দেওয়া হয় ওভারির স্টিমুলেশনের অর্থাৎ ডিম্বাণু তৈরির জন্য। এই ওষুধ অনেক ক্ষেত্রে দায়ী OHSS এর জন্য। স্টিমুলেশনের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে একসঙ্গে অনেক ডিম্বাণু তৈরি হয় এবং ওভারি থেকে কিছু রাসায়নিক নিঃসৃত হয়ে রক্ত মিশে যায়। এর ফলে পেটে ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে হার্ট ও লাংসে জল জমে যায়। OHSS এর জন্য কিডনি, লিভার ও লাংসেরও ক্ষতি হতে পারে। সময় মতো ব্যবস্থা না নিলে রোগী মারাও যেতে পারে। যদিও তার সম্ভাবনা খুবই কম।
কাদের এই ধরণের সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশিঃ
IVF করার সময় Mild OHSS খুব সাধারণ ঘটনা। ১০০ জনে ৩৩ জনেরই এমন সমস্যা হয়। সেখানে Moderate বা Severe OHSS এর চান্স ১% এরও কম। তবে এই সমস্যার ঝুঁকি তাদেরই বেশি থাকে যাদের পলিসিস্টিক ওভারি থাকে, যাদের বয়স ৩০ বছরের কম, যাদের আগেও OHSS হয়েছিল। যদি এ ধরণের মহিলাদের IVF করে pregnancy আসে তাহলে OHSS সম্ভাবনা বেশি থাকে।
এই উপসর্গ কতদিন থাকে?
বেশিরভাগ সময় উপসর্গগুলো ৭-১০ দিন স্থায়ী হয়। যদি কারো ফার্টিলিটি চিকিৎসা কাজ না করে অর্থাৎ প্রেগন্যান্সি না আসে তাহলে আপনাআপনি মিলিয়ে যায়। যদি IVF করে প্রেগন্যান্সি আসে তাহলে OHSS বেশ কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে।
যদি কারো Mild OHSS থাকে তাহলে কী করণীয়?
এরকম লক্ষণ দেখা দিলে বাড়িতে থাকা দরকার। নির্দিস্ট সময়ের ব্যবধানে জল খেতে হবে। অবশ্য তা নির্ভর করবে কতটা তেষ্টা পাচ্ছে তার অপর। যদি পেটে বা বুকে ব্যথা হয় তাহলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। এ সময় অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ড্রাগ যেমন অ্যাসপিরিন বা কোনো ব্যথার ওষুধ খাওয়া চলবে না। কারণ এই সব ওষুধ থেকে কিডনি খারাপ হতে পারে। রক্ত জমাট বাধা এড়াতে কর্মক্ষম থাকা দরকার।
কখন ডাক্তারবাবুর কাছে যাবেন?
প্যারাসিটামল খাওয়া সত্ত্বেও যদি ব্যথা না কমে, বমি হয়, বুকে ব্যথা করে বা ইউরিন কম হয় তাহলে দেরি না করে ডাক্তার বাবুর পরামর্শ নেওয়া দরকার।
সেখানে যাওয়ার পর ডাক্তারবাবু প্রথমে জেনে নেবেন ইউরিনের পরিমাণ ও তার রঙ সম্পর্কে, রক্তচাপ, পালস রেট ও শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি দেখবেন, শরীরের ওজনের অনুপাতে কোমরের মাপ দেখে কতটা জল জমেছে তা্র ধারণা করবেন, আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান করে ওভারির সাইজ দেখে নেবেন। এছাড়াও রক্তপরীক্ষা করবেন ও কিডনি অবস্থা সম্পর্কে জানবেন। তবে এও ঠিক, সব রোগীর সব রকম পরীক্ষা দরকার হয় না। লক্ষণ দেখে কার কী পরীক্ষা দরকার তা ডাক্তারবাবু ঠিক করেন।
কখন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়?
অনেক সময় রোগীকে আউটডোরে দেখে ওষুধপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে কখনও কখনও ভর্তি রেখে চিকিৎসার দরকার হয়। বিশেষ করে রোগীর যদি
• ব্যথা কমানোর ওষুধ দেওয়া সত্ত্বেও ব্যথা না কমে।
• খুব বেশি বমি হয় বা বমিভাব থাকে
• রোগীর অবস্থার উন্নতি না হয়
• যদি রোগীর পক্ষে বাড়ি থেকে হাসপাতালে যাতায়াতে অসুবিধা হয়
খুব বেশি বমি হলে শরীরে জলের অভাব মেটানোর জন্য স্যালাইন দিতে হতে পারে। এতে করে জল ছাড়াও সুগার, কার্বোহাইড্রেট, মিনারেলস অর্থাৎ শরীর ঠিকমতো চালানোর জন্য যা যা দরকার সে সবের ঘাটতি মেটানো যায়। হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন অবশ্যই কোনও ইনফার্টিলিটি স্পেশালিষ্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার।
চিকিৎসা কী?
সেই অর্থে এর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। সময়ের সঙ্গে ঠিক হয়ে যায়। আর সাধারণত রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয় যাতে তা জটিল আকার নিতে না পারে। যেমন ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল, বমি কিংবা বমিভাব দূর করার ওষুধ, স্যালাইনের মাধ্যমে জলের ও অন্যান্য মিনারেলসের ঘাটতি দূর করা হয়। থ্রম্বোসিসের আশংকা কাটাতে কখনও কখনও রোগীকে হেপারিন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। আবার খুব বেশি জল জমে গেলে সরু সূচ দিয়ে পেট থেকে জল বের করাও হতে পারে।
যদি কেউ প্রেগন্যান্ট হয় ও তার OHSS থাকে তাহলে কী করণীয়?
• পায়ে বা লাংসে যাতে রক্ত জমে না যায় তার জন্য রক্ত তরল রাখার ইঞ্জেকশন দিতে হবে, অন্তত ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত।
• প্রি এক্ল্যাম্পশিয়া অর্থাৎ ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাওয়া অথবা প্রি টার্ম ডেলিভারি মানে হতে পারে, অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই শিশু জন্মাতে পারে। যদিও OHSS-এর কারণে শিশুর কোনো ক্ষতি হয় কিনা এখণ জানা যায় নি।